অফিস করেন দু-চার দিন, বেতন নেন সারা মাসের

রেলওয়ে চাঁদপুরে হারুন- মালেক সিন্ডিকেট : অফিস না করেই তোলেন বেতন

Passenger Voice    |    ০৪:১৮ পিএম, ২০২২-১২-০৮


রেলওয়ে চাঁদপুরে হারুন- মালেক সিন্ডিকেট : অফিস না করেই তোলেন বেতন

নিজস্ব প্রতিবেদক ।। লাকসাম থেকে চাঁদপুর সবখানেই রেলের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) মো. হারুনের অনিয়মের শিকড় । ২০২০ সালে জানুয়ারিতে অবৈধ বিদ্যুত সংক্রান্ত অনিয়মের অভিযোগে তাঁকে বদলি করা হয় লাকসাম থেকে চাঁদপুরে। চাঁদপুরে এসেও থেমে নেই তাঁর নানা অনিয়ম। লাকসাম থাকাকালীন বিদ্যুত বিভাগে অনিয়ম করলেও চাঁদপুর এসে করছেন এর চেয়েও বড় অনিয়ম। অফিস না করেও পুরো মাসের বেতন ভোগ করছেন চাঁদপুরে রেলের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) মো. হারুন । মাসে অফিস করেন দু-চার দিন,  আর বেতন নেন সারা মাসের। শুধু হারুন নিজে নয় তাঁর অধীনে থাকা অপর ১২ কর্মচারীও একই কায়দায় ভোগ করছেন সরকারী সুযোগ সুবিধা। অবশ্য এ জন্য উপসহকারী প্রকৌশলী হারুনকে কমিশন দিতে হয় তাদের।

সপ্তাহে এক দিন এসে ছয় দিনের উপস্থিতির অগ্রিম স্বাক্ষর করেন। মাস শেষে ঠিকই তুলে নেন পুরো মাসের বেতন। তাঁর অধীনে ১২ জন কর্মচারী আছেন। কয়েকজন ছাড়া বাকিরাও মাসে নামমাত্র দুই-চার দিন কাজ করে পুরো মাসের বেতন তুলছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই সুবিধা নেওয়ার জন্য তাঁরা মাসের বেতনের ৩০ শতাংশ টাকা তুলে দেন হারুনের হাতে। লাইনম্যানের পরিবর্তে খালাসি দিয়ে করানো হচ্ছে লাইনম্যানের কাজ। টাকা না দিলে বিভিন্ন অজুহাতে তাঁর অধীনের কর্মচারীদের দূরবর্তী জায়গায় বদলি করা হয়। বেশ কয়েকটি অডিও ক্লিপে হারুনের ঘুষ লেনদেন হাজিরা খাতায় অগ্রিম স্বাক্ষর করার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

তাঁর অধীনে একজন মিটার রিডার, একজন লাইন ইলেকট্রিশিয়ান, দুজন ইলেকট্রিক ফিটার আটজন খালাসিসহ মোট বারোজন কর্মচারী আছেন। অভিযোগ রয়েছে, পাওয়ার সাইডে কোনো লাইনম্যান না থাকায় খালাসি দিয়ে লাইনম্যানের কাজ করানো হয়। হারুন চাঁদপুর যাওয়ার পর মিটার রিডার গ্রেড- মালেক, খালাসি জালাল খালাসি সেকেন্দারকে নিয়ে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। তাঁদের কাজ হলো কোনো কর্মচারী যদি কোনো কাজ না করে পুরো মাসের বেতন তুলতে চান, তাহলে তাঁদের কাছ থেকে বেতনের নির্দিষ্ট একটি অংশ আদায় করা। যেমন কেউ যদি ১৫ দিন কাজ করে ৩০ দিনের টাকা তুলতে চান, তাহলে তাঁকে ১৫ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়। এই টাকা বুঝে নেন মিটার রিডার আব্দুল মালেক। পরে এই টাকা হারুনের কাছে যায়। মালেক এক জায়গায় ১৮ বছর চাকরি করছেন। অথচ সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী বছরের বেশি থাকার নিয়ম নেই। তাঁর সঙ্গে খালাসি জালাল সেকেন্দারের চাকরির বয়সও বছর। তাঁদের অনিয়ম নিয়ে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারেন না। কেউ প্রতিবাদ করলে তাঁকে বদলি করা হয়।

লাকসাম-চাঁদপুর দপ্তরে ২০০০ সাল থেকে কোনো অফিস সহকারী নেই। মিটার রিডার মালেককে দিয়ে প্রশাসনিক কাজ করানো হয়। হারুন যদিও ডিপ্লোমাধারী কিন্তু কোনো কাজেরই ড্রয়িং জানেন না বলে অভিযোগ। লাকসাম থাকতে ড্রয়িং করাতেন লাইনম্যান সুফিয়ানকে দিয়ে আর এখন চাঁদপুরে খালাসি সেকেন্দারকে দিয়ে করানো হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হারুন নিয়মিত প্রতিদিন অফিস করেন না। সপ্তাহে এক দিন অফিস করে পুরো সপ্তাহের হাজিরা একসঙ্গে স্বাক্ষর করেন তিনি। তাঁর অনুপস্থিতিতে অফিসের যাবতীয় কাজ দেখভাল করেন মিটার রিডার মালেক। হারুনের দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে মালেক কর্মচারীদের অনৈতিক সুবিধা দিয়ে মাসে মাসে অবৈধ আয় করছেন। একটি মিটিংয়ে মালেক দম্ব করে বলেন রেলের প্রত্যেকটা নাড়ি-নক্ষত্র আমার জানা। জিএমের সঙ্গে আমার সম্পর্ক, চট্টগ্রামে কাজ ভাগ করে বাবর আলীর (যুবলীগ নেতা) সঙ্গে ভালো সম্পর্ক। আমাকে বাধা দেবে কে?’ খালাসি হাসান নামে এক কর্মচারী হারুনের সামনে মিটার রিডার মালেকের কাছে ছুটির আবেদন ফরম চাইলে তাঁর কাছে টাকা দাবি করেন মালেক। 

এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) মো. হারুন বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয় সে জন্য প্রতিদিন উপস্থিত থাকতে পারি না। তবে ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি সত্য নয় বলে জানান তিনি।  মিটার রিডার মালেককে টাকা দাবি জিএম বাবরের ক্ষমতা দেখিয়ে অনৈতিক সুবিধা আদায়ের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি তা অস্বীকার করেন।এসব বিষয়ে পূর্বাঞ্চল রেলের প্রধান বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী অজয় কুমার পোদ্দার বলেন, ‘কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ দিলে তদন্ত করা হবে।

পিভি/জেএম/ডেস্ক